লামায় পাহাড় কাটার মহোৎসব

পার্বত্য জেলা বান্দরবান উপজেলা লামায় পাহাড় কাটার মহোৎসব

(বিশেষ প্রতিনিধি)

বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাইতং সহ বিভিন্ন ইউনিয়নে একাধিক পাহাড়ের মাটি, বালু ও গাছ কেটে বিক্রি সহ নানা স্বার্থে এসব পাহাড় গুলোকে নির্বিচারে বিলীন করে যাচ্ছেন কিছু অসাধু পাহাড় ও গাছ খেকো ব্যবসায়ী চক্র। সকাল থেকে রাত সমানতালে চলে এসব পাহাড় কাটার মহোৎসব।

প্রতিনিয়ত চলে বনাঞ্চলের ঘেরা গাছ-পালা ও পাহাড় কাটার ধুম। বিগত কয়েক বছরে এ অঞ্চল গুলোর প্রায় অর্ধেকের চেয়ে বেশি পাহাড় ও টিলা কেটে সমতল করা হয়েছে। এ নিয়ে স্থানীয় লোকজনের মাঝে চাপা ক্ষোভ থাকলেও ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারছেন না।প্রভাবশালী মহলটি ক্ষমতার দাপট ও প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পাহাড়ের মাটি ও গাছ কেটে সাবাড় করে ফেলছে বনাঞ্চল। ফলে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকি মুখে পড়েছে। অন্যদিকে যেমন সরকারি সম্পদ ধ্বংস ও জবরদখল হচ্ছে, তেমনি সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, উঁচু পাহাড়ের মাঝখানে মাটি কেটে করা হয়েছে সমতল। পাশেই অস্থিত হারানোর পাহাড়ের ক্ষত-বিক্ষত চিহ্ন। কোথাও কোথাও পাহাড়ের বুক চিরে সমতল করা জায়গায় স্থানীয় এক শ্রেণীর বাসিন্দারা ঘর নির্মাণের কাজে ব্যস্ত। যেন পাহাড় কাটার উৎসবে নেমেছে ফাইতং ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায়। সে সঙ্গে পাহাড়ের চূড়ায় থাকা বিভিন্ন প্রজাতির গাছ নিধন করে ফেলছে। প্রকৃতির বুকে জীববৈচিত্র্য এখন হুমকির মুখে। যার কারণে এখন বন্যপ্রাণীরা লোকালয়ে চলে আসছে।

এছাড়াও পাহাড়ের মাটি কাটার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে অধ্যাধুনিক মেশিন। এর মাধ্যমে দ্রুততার সঙ্গে পাহাড়ের মাটি গুলোকে কেটে ফেলা হচ্ছে। সেগুলো ট্রাক/ডাম্পার গাড়ি করে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। আবার অনেকেই গর্ত বা জমি ভরাট করে ঘর বাড়ি নির্মাণ করে যাচ্ছে। ফলে সরকারি জায়গা গুলো বেদখল হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে পাহাড় কাটার দৃশ্য দেখা যায় ফাইতং ইউনিয়নের মানিকপুর, ডেস্টিনি বাগান, লম্বাশিয়া সহ আরও বিভিন্ন স্থানে। এই পাহাড় কাটার কান্না কর্তৃপক্ষ না শুনলেও, শুনেছেন স্থানীয়’রা।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, বিনা বাঁধায় মাইলের পর মাইল পাহাড় কেটে সাবাড় করে যাচ্ছে চক্রগুলো।
তারা প্রভাবশালী হওয়ায় সাধারণ মানুষ ভয়ে মুখ খুলছেন না। রাষ্ট্রের নির্দেশনা প্রশাসন বাস্তবায়নে যদি কোনো উদ্যোগ না নেয়, তাহলে আর কিছু সময়ের পর ওই এলাকা গুলো আর কোন পাহাড় ও বন খুঁজে পাওয়া যাবে না।

সচেতন নাগরিক বলেন, পাহাড় ও বনের গাছ কাটার বিষয়ে আমরা সুশীল সমাজ প্রতিবাদ করলেও কোন ধরনের প্রতিক্রিয়া হয় না। প্রশাসন মাঝে মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও আবার থমকে যায়। অন্য দিকে দিন দিন পাহাড়ি জনপদ গুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে ভারসাম্যহীনতা ঘটে থাকে। পরিবেশের ভারসাম্যহীনতা প্রধানত অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে স্থাপনা এবং বনজ সম্পদের নির্মূলীকরণের মাধ্যমে ঘটে। তাই পাহাড় ও বন রক্ষায় প্রশাসনকে এগিয়ে আসার আহ্বানও জানান তারা।

এবিষয়ে ফাইতং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক বলেন, আসলে দীর্ঘদিন ধরে ইউনিয়নে পাহাড় কেটে যাচ্ছে। তবে পাহাড় কাটার কার্যক্রম ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষেই পারে বন্ধ করতে।

বনাঞ্চল উজাড় করে গাছ কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে লামা বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আরিফুল হক বেলাল-এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এ ব্যাপারে বান্দরবান পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোঃ ফখর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, পাহাড় কাটার বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে জানলাম। পাহাড় কাটা সম্পূর্ণ বেআইনি। এ ব্যাপারে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *