ময়মনসিংহে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে শেষ হলো দুর্গোৎসব

ময়মনসিংহে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে শেষ হলো দুর্গোৎসব

গোলাম কিবরিয়া পলাশ, ময়মনসিংহ।।
পুলিশের কড়া নিরাপত্তায় সারাদেশের ন্যায় ময়মনসিংহেও ঢাকের বাদ্য আর আবীর খেলা ও
বিজয়া দশমী ও প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে মঙ্গলবার সন্দ্যায় শেষ হয়েছে সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা।

মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) সন্ধায় ময়মনসিংহ নগরীর বিভিন্ন পুজামন্ডপ থেকে হাজার হাজার মানুষের বিজয়া শোভাযাত্রা বের হয়। শঙ্খ আর উলুধ্বনি, খোল-করতাল-ঢাকঢোলের সনাতনী বাজনার সঙ্গে দেবী-বন্দনার গানের মধ্য দিয়ে প্রতিমা নিয়ে আসে নগরীর কাচারি ঘাট ব্রহ্মপুত্র নদের বিসর্জন ঘাটে। সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে সারিবদ্ধভাবে একে একে শুরু করে প্রতিমা বিসর্জন।

বিসর্জন ঘাটে উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন মেয়র ইকরামুল হক টিটু, জেলা প্রশাসক মোস্তাফিজার রহমান, পুলিশ সুপার মাসুম আহমেদ ভূঞা, কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি শাহ কামাল আকন্দসহ জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশ, জেলা গোয়েন্দা শাখা ডিবি পুলিশ র‌্যাবসহ বিপুল সংখ্যাক আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী শোভা যাত্রা থেকে বিসর্জন ঘাটে উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে মণ্ডপগুলোতে চলে সিঁদুর খেলা আর আনন্দ-উৎসব। হিন্দু সধবা নারীরা প্রতিমায় সিঁদুর পরিয়ে দেন। একে অন্যকে সিঁদুর পরিয়ে দেন। চলে মিষ্টিমুখ, ছবি তোলা আর ঢাকের তালে তালে নাচ-গান।

শোভাযাত্রায় যুক্ত ছিলেন ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের জনপ্রিয় মেয়র ইকরামুল হক টিটু। আনন্দ উল্লাস ও উচ্ছ্বাসে সনাতন ধর্মালম্বীরা ময়মনসিংহের নগর পিতা সর্বজনপ্রিয় আ. লীগ নেতা ইকরামুল হক টিটুকে রাঙিয়ে দেয় রঙ দিয়ে।

সর্বত্রই লক্ষ করা গেছে কঠোর নিরাপত্তা। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ ছিল সতর্কাবস্থায়। রাস্তার পাশে দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। বেশ কয়েকটি পুজা মন্ডপের আয়োজকের সাথে কথা বলে জানা যায় শতভাগ নিরাপত্তা ও সর্বাত্তক সহায়তা পেয়ে তারা সবাই অনেক খুশি।

প্রতিমা বিসর্জনের জন্য নজিরবিহিন নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। প্রতিটি মন্ডপে শারদীয় উৎসব নির্বিঘ্নে উদযাপন করার জন্য প্রশাসনের পাশাপাশি প্রতিটি পূজা উদযাপন কমিটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা দায়িত্ব পালন করে। প্রতিটি মন্ডপে মন্ডপে লাগানো হয়েছিল সিসিটিভি ক্যামেরা এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি করা হয়েছিল মন্ডপ পাহারার জন্য।

মানুষের মনের আসুরিক প্রবৃত্তি কাম, ক্রোধ, হিংসা, লালসা বিসর্জন দেয়াই মূলত বিজয়া দশমীর মূল তাৎপর্য। এ প্রবৃত্তিগুলোকে বিসর্জন দিয়ে একে অন্যের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হবে। বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে এমন বিশ্বাস নিয়েই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এই দুর্গাপূজা।

চন্ডীপাঠ, বোধন ও অধিবাসের মধ্যদিয়ে গত ২০ অক্টোবর থেকে দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের সূচনা হয়। টানা ৫দিন পূজা-অর্চণার মধ্যদিয়ে ভক্তরা দেবী দুর্গার প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন।

স্বর্গলোকের কৈলাসের স্বামীর ঘর থেকে দেবী দুর্গা ফিরে এসেছেন এই ধরণীতে তার বাবার বাড়িতে। গত বছর তিনি এসেছিলেন হাতির উপর চড়ে। ৫দিন পর আবার দেবী দুর্গা স্বামীর বাড়ি ফিরেছিলেন নৌকায় করে। এবার তিনি এসেছেন ঘোড়ায় করে। ৫দিন পর স্বর্গলোকের কৈলাসের স্বামীর ঘরে দেবী দুর্গা ফিরে গেলেন ঘোড়ায় চড়ে। পরের বছর শরতে দেবী দুর্গা আবার আসবেন এই ধরণীতে। ময়মনসিংহ জেলায় মোট ৮শতাধিক পুজা মন্ডপে উৎযাপিত হয়েছে এই দুর্গোৎসব।

এই দুর্গোসবে অসংখ্য মুসলিম ধর্মের লোকজনকেও সরাসরি যুক্ত হতে দেখা গেছে। হিন্দু মুসলমানদের অংশগ্রহনে সার্বজনীন সামাজিক উৎসবে লক্ষ করা গেছে এই দুর্গোউৎসবে। এই দুর্গোউৎসবে অনেকটাই স্পষ্ট হলো সৌহার্দ্য-সম্পৃতির দেশ বাংলাদেশ। এই দেশে সব ধর্মরেই স্বাধীন। সবার অধিকার সমান। প্রমাণ হয়েছে ধর্ম যার-যার উৎসব সবার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *