লোহাগাড়ায় ভুয়া পরিচয়ে এক রোহিঙ্গার এনআইডি ও পাসপোর্ট তৈরি
(বিশেষ প্রতিনিধি)
চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বড়হাতিয়া ইউনিয়নে মিয়ানমার থেকে আসা আব্দুল আজিজ নামের এক রোহিঙ্গা ভুয়া পরিচয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশি এনআইডি ও পাসপোর্ট তৈরি করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ওই রোহিঙ্গা তার শ্বশুর-শাশুড়িকে বাবা-মা সাজিয়ে বাংলাদেশি এনআইডি ও পাসপোর্ট করে বিদেশে পালিয়ে যায়।
ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার বড়হাতিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের হোসেন নগর এলাকায়। বিষয়টি স্বীকার করেছেন পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গা আব্দুল আজিজ এর শ্বশুর মো. ইলিয়াস।
সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় সূত্র জানা যায়, পরিচয় গোপন রেখে রোহিঙ্গা নাগরিক আব্দুল আজিজ কয়েক বছর পূর্বে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। এরপর থেকে বড়হাতিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে হোসেন নগর এলাকায় বসবাস শুরু করেন। পরে ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মো. ইলিয়াসের সরলতার সুযোগ নিয়ে তার মেয়ে বেবি আক্তারকে বিয়ে করে। পরে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বাংলাদেশি নাগরিক হিসাবে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বানিয়ে নেন। এতে বাবার নাম উল্লেখ করা হয়েছে মোহাম্মদ ইলিয়াছ ও মায়ের নাম উল্লেখ করা হয়েছে রশিদা বেগম। অথচ ইলিয়াছ তার শ্বশুরের নাম আর রশিদা তার শাশুড়ির নাম। কয়েক মাস আগে বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে যখনই সৌদি আরবে পালিয়ে যান তখনই বিষয়টি এলাকাবাসীর নজরে আসে। এরপর থেকে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে রোহিঙ্গা আব্দুল আজিজের শ্বশুর মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আব্দুল আজিজ তার বাড়িতে ছিলেন। তার বাড়ি টেকনাফ পরিচয় দিয়ে থাকতেন। পরে তার কাছে আমার মেয়ে বেবি আক্তার কে বিয়ে দেই। তার এখনো সঠিক পরিচয় পাওয়া যায়নি। কখনো মেয়ের শ্বাশুর বাড়ি দেখেনি। পরে আমাদের অজান্তে আব্দুল আজিজ শ্বশুর-শ্বাশুড়ির এনআইডি ব্যাবহার করে তার এনআইডি ও পাসপোর্ট করে নেন। সে এখন সৌদি আরবে চলে গেছে। বাংলাদেশে থাকা তার স্ত্রী ও পাঁচ সন্তান রয়েছে।
স্থানীয় এক আ.লীগ নেতা জিয়াবুল হক চৌধুরী (লাতু) বলেন, বিষয়টি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদকে একাধিক বার অবগত করার পরেও তারা কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি বলেও জানান তিনি।
বড়হাতিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশ (চৌকিদার) পুর্নেন্দু বিকাশ রুদ্র বলেন, আমি গ্রাম পুলিশের দায়িত্বে আছি ২৩ বছর। কিন্তু আব্দুল আজিজ কি ভাবে এনআইডি কার্ড করেছে আমি জানি না। তবে তিনি দীর্ঘদিন ধরে হোসেন নগরে বসবাস করে আসছে।
এদিকে ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবু বক্কর ছিদ্দীক বলেন, ওই রোহিঙ্গার জাতীয় পরিচয়পত্রটি আমি মেম্বার থাকা অবস্থায় হয়নি, সাবেক ইউপি সদস্যের আমলে হয়েছে। আর পাসপোর্ট তৈরির সময় কেউ আমার কাছে তদন্তের জন্য আসেনি।
এবিষয়ে বড়হাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিজয় কুমার বড়ুয়া বলেন, রোহিঙ্গা আব্দুল আজিজের এনআইডি কার্ড কখন হয়েছে এবং কি ভাবে হয়েছে সাংবাদিকদের কে খবর নেওয়ার জন্যও বলেন তিনি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাচন অফিসার আব্দু শুক্কুর বলেন, রোহিঙ্গা আব্দুল আজিজ নামে ব্যক্তির এনআইডি কার্ড আমি আসার অনেক আগে হয়েছে।
তারপরেও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বারের মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে দেখবে বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইনামুল হাছান বলেন, এই বিষয়ে আমি অবগত না। তবে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।