লোহাগাড়ায় বৈধতার আড়ালে বালু উত্তোলনের মহোৎসব
(বিশেষ প্রতিনিধি)
চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলায় বৈধতার আড়ালে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে এক শ্রেণীর অসাধু বালু ব্যবসায়ীরা। প্রতিদিন শত শত বালুবাহী ট্রাক, ডাম্পার যোগে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করা হচ্ছে। এতে করে সরকার হারাচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব। অন্য দিকে ভারি যানবাহন চলাচলের কারণে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে পড়েছে গ্রামীণ সড়ক গুলো। ফলে যাতায়াত ব্যবস্থা একেবারে নাজুক।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের পানত্রিশা, ফারাঙ্গা খালের মুখ, ঘোড়ার চর, সড়ইয়া খালের মুখ, ফারাঙ্গা ইব্রাহিম বাপের বাড়ি সংলগ্ন সহ একাধিক জায়গা থেকে বালু ব্যবসায়ীদের অভিনব কায়দায় বালু উত্তোলনের দৃশ্য চোখে পড়ে।সরকারি আইনকে অমান্য করে এবং প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসবে মেতে ওঠেছে বালুখেকোরা। অনেকেই রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় টেইলা পাহাড়, ছড়া, খাল-বিল ও কৃষি জমিতে ড্রেজার ও শ্যালো মেশিন বসিয়ে ইজারার নাম ভাঙ্গিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে সিন্ডিকেট চক্র। যত্রতত্র বালু উত্তোলনের ফলে ক্ষতি হচ্ছে এসব এলাকার রাস্তাঘাট, সেতু-কার্লভাট ও ফসলি জমি। হারাচ্ছে পরিবেশ জীববৈচিত্র্য, আর সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। ড্রেজার মেশিন ও বালুবাহী ডাম্পার ও ট্রাকের বিকট শব্দে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী।
জানা গেছে, প্রশাসন কর্তৃক ইজারাকৃত খালের বাইরে আরও একাধিক অবৈধ স্থানে রয়েছে, যেখান থেকে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় প্রতিনিয়ত বালু পাচার করে যাচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। আবার বৈধগুলোও এক জায়গার কথা বলে ইজারার শর্ত ভেঙে অন্যান্য জায়গায় বালু উত্তোলন করছে। প্রতিদিন শত শত বালুভর্তি ট্রাক চলাচলের কারণে রাস্তা মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসব বালুভর্তি ট্রাক প্রায় সময় রাস্তার মাঝে নষ্ট হয়ে রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি করে। ভোগান্তিতে পড়েন ওই রাস্তা দিয়ে শিক্ষার্থী সহ যাতায়াতকারীরা। যে কারণে স্থানীয়রা ওই রাস্তাকে জনভোগান্তির আরেক নাম ‘বালুবাহিত ট্রাক’ বলে অভিহিত করেছেন।
সম্প্রতি সরেজমিনে গেলে এলাকাবাসী ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, বালুখেকোরা রাস্তা-ঘাট, ধানিজমি, কালভার্ট ধ্বংস করে যাচ্ছে। ভয়ে কেউ কিছু বলার সাহস পায় না। অধিকাংশ বালুমহাল ব্রিজ ও কালভার্ট সংলগ্ন এবং ধানিজমি থেকে শেলো মেশিনের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করছে অবৈধ বালু ব্যবসায়ীরা। মাঝে মধ্যে প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করলেও এসব অসাধু বালু ব্যবসায়ীদের থামানো যাচ্ছে না। তারা প্রশাসন ও নিলামের নাম ভাঙ্গিয়ে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে।
অন্যদিকে উপজেলা মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে অবৈধভাবে পাহাড়, কৃষি জমির টপসয়েল ও বালু উত্তোলনের প্রসঙ্গটি সভায় ওঠে আসলে বক্তারা এ অপতৎপরতা বন্ধের দাবিসহ অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করে রাস্তা-ঘাট রক্ষায় প্রশাসনকে আরো কঠোর আইন প্রয়োগের অনুরোধ করা হয়।
স্থানীয় চুনতী ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জানে আলম জানু বলেন, নতুন করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন কারা করতেছে আমার জানা নেই, তবে খবর নিয়ে দেখবে বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে লোহাগাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুন লায়েল বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কোন সুযোগ নেই এবং উপজেলা প্রশাসনের পক্ষথেকে কোন ধরনের নতুন করে বালু উত্তোলন ইজারা দেয়া হয়নি। এই ধরনের অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।