লামায় তুঁত চাষে স্বাবলম্বী হচ্ছেন শত শত প্রান্তিক চাষি

লামায় তুঁত চাষে স্বাবলম্বী হচ্ছেন শত শত প্রান্তিক চাষি

বেলাল আহমদ,নিজস্ব প্রতিবেদক,
রেশম একটি কৃষি নির্ভর শ্রমঘন গ্রামীণ কুটির শিল্প। পরিবারের আবালবৃদ্ধবনিতা, বেকার, বিশেষ করে মহিলারা এই পরিবার কেন্দ্রিক কর্মকান্ডের সংগে জড়িত হয়ে অর্থ উপার্জন করতে পারেন।অন্যান্য ফসলের তূলনায় রেশম চাষে অধিক লোকের কর্মসংসহান হয়। ১ হেক্টর জমিতে রেশম চাষ করলে ১২/১৩ জন লোকের কর্মসংসহান হয় যেখানে অন্য ফসলে ৪/৫ জনের বেশী হয় না। রেশম চাষে বছরে কমপক্ষে ৪/৫ বার ফসল ফলানো যায় এবং অধিক অর্থ উপার্জন করা যায়।আবাদী, অনাবাদী, রাস্তার ধার, বাড়ীর আশপাশের খন্ডিত জমি, বাঁধের ধার, জমির আইল প্রভৃতি যে কোন পতিত জমিতে তুঁত গাছের আবাদ করা যায়।তুঁতগাছ ৩০-৩৫ পর্যন্ত বছর বাঁচে ।একবার এ গাছ লাগালে এবং সীমিত যত্নের মধ্যে রাখলে দু’মাস পর পর এ গাছ থেকে এক নাগাড়ে ৩০-৩৫ বছর পলুপালন করে অর্থ রোজগার করা যায় ।তুঁত গাছের শিকড় মাটির অতি গভীরে যায়। যে কারনে খরার সময় বৃষ্টিপাত না হলে বা সেচ না দিতে পারলেও মোটামুটিভাবে ফসল হয় যা অন্যান্য কৃষি ফসলে  হয় না।এ শিল্পে তূলনামূলকভাবে অল্প মুলধন কাজে লাগিয়ে অধিক অর্থ উপার্জনের ব্যবসহা নেয়া যায় ।
সরেজমিনে লামা উপজেলার রুপসিপাড়া ইউনিয়নের লেবুঝিড়ি,নয়াপাড়া, শিলেরতুয়াসহ পৌর এলাকার বেশ কয়েকটি গ্রামে গিয়ে কথা হয় রেশম চাষিদের সঙ্গে। ইব্রাহীম লিডার পাড়া গ্রামের রেশম চাষি অমিকা বড়ুয়া বলেন, রেশম চাষ অনেক লাভজনক। আমি দীর্ঘদিন ধরে রেশম চাষের সঙ্গে জড়িত। এ খাত থেকে আসা আয়ে সংসারের খরছের একটি বড় অংশ আয় হয়। রেশম চাষের ব্যবস্থা না থাকলে প্রত্যন্ত এই এলাকায় আমার কিছুই করার ছিল না।

একই এলাকার রেশমচাষি মো. জাফর, বলেন, আমার পরিবারের সবাই মিলে রেশম চাষ করি। ঘরের এক কোণায় মাচা পেতে পলু পোকা লালন-পালন করি। বছরে চারবার ১০০ করে পলু পোকার ডিম উঠাই। একবার ডিম উঠালে ২০-২৫ দিনের মধ্যেই রেশমের গুটি হয়। তাতে ১০০ পুলু পালনে ৪০ হাজার টাকা লাভ হয়। বছরে কোনো খরচ ছাড়াই গ্রেডিং ভাল হলে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা লাভ করা যায়।

অফিস সূত্রে জানাযায়, পলু পালন করার জন্য যাবতীয় সরঞ্জাম দেওয়া হয়, ডিম ও পলু উপর নির্ভর করে সরঞ্জাম ডালা,চন্দ্রকী,ঘড়া,ও সুতার জাল দেওয়া হয় বিনামূল্যে

একটি ঘরের ৫ ফুট স্কয়ার ডালায় পলুর ডিম রাখতে হয়। সেখানে তুঁতের পাতা দিলেই পলুগুলো খেয়ে খেয়ে ২৫ থেকে ত্রিশ দিনের মধ্যে রেশম গুটি হয়। এই গুটি বছরে চারবার উৎপাদন করা হয়। প্রতি ১০০ পলু পালনে ৪০ হাজার টাকা লাভ হয়। বছরে কোনো খরচ ছাড়াই ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা লাভ হয়।

তাছাড়া প্রতিটি চাষিগণ তুঁত গাছ চাষ করলে জীবিত হারে গাছপ্রতি প্রথম বছর আট টাকা,দ্বিতীয় বছর চার টাকা ও তৃতীয় বছর চার টাকা পান।

লামা রেশম সম্প্রসারণ কেন্দ্রের ম্যানেজার ও টেকনিক্যাল অফিসার মোঃ ফেরদৌসুর রহমান
জানান, লামা রেশম সম্প্রসারণ কেন্দ্রর অধীনে পৌরসভা,গজালিয়া,লামা সদর,রুপসিপাড়া ইউনিয়নের বেশকিছু এলাকায় রেশম চাষ হচ্ছে। এতদ হতদরিদ্র পরিবারের নারীদের স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যেই এ চাষের শুরু, বেশ কয়েক বছর আগে। সমন্বিত প্রকল্পের অধীনে রেশম চাষে নারীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে এই চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয়। লামায় একশ জন তুঁত চাষির বাড়ীতে পলু ঘর নির্মাণসহ যাবতীয় আনুসাঙ্গিক কাজে সাহায্য করেছে রেশম বোর্ডের তরফ থেকেই।

রাঙ্গামাটি রেশম সম্প্রসারণ কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক ড. মো সিরাজুর রহমান বলেন, ১৯৮০ সালে লামা উপজেলায় রেশম সম্প্রসারন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমান সরকার গ্রামীন নারীদের স্বাবলম্বী করতেই আরো ভাল করে রেশম চাষ সম্প্রসারনে উদ্যোগ নেয়া নিয়েছে। ২০১৯ সাল থেকে গত চার অর্থ বছরে বাংলাদেশ রেশম শিল্প সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের লক্ষ্যে সমন্বিত এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল ১শ পরিবারে। এখন আরও পরিবার এই চাষে যুক্ত হচ্ছে।
সরকারী এই উদ্যোগে তুঁত গাছ, রেশম গুটি ও সুতা সংগ্রহ পুরো প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকে রেশম বোর্ড। কাপাসিয়ার রেশম চাষী নারীদের নির্বিঘ্ন চাষও বাজারজাতের কারণে কয়েক মাস পরেই তারা ভালো টাকা আয় রোজগার করতে পারেন। রেশম তুঁত চাষ করে অনেক পরিবারের মুখেই স্বচ্ছলতার হাসি এনে দিয়েছে।
তিনি আরো জানান, দেশে মোট বারটি রেশম সুতার কারখানা আছে, তার মধ্যে তিন পার্বত্য জেলার বান্দরবানের লামায় একটি সুতা কার খানা আছে। এটি লামা তুঁত চাষিদের জন্য অনেক আশারআলো জাগায়। এতে নতুন করে আশা জাগাচ্ছে ওইসব অঞ্চলে। স্বাবলম্বী হচ্ছেন শত শত প্রান্তিক চাষি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *