চুনতি জনবসতি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে তামাক চাষ, বাড়তে পারে স্বাস্থ্যঝুঁকি

চুনতি জনবসতি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে তামাক চাষ, বাড়তে পারে স্বাস্থ্যঝুঁকি

(বিশেষ প্রতিনিধি)

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি ইউনিয়নে বাড়ছে ক্ষতিকর এই তামাক দ্রব্যের চাষ। জমিগুলোতে অন্যান্য ফসলের চেয়ে তামাকের উৎপাদন বেশি হওয়া এবং স্থানীয় বাজার গুলোতে তামাকের আশানুরূপ মূল্য পাওয়ার আশায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চক্র তামাক উৎপাদনে মরিয়া হয়ে উঠছেন। এ অবস্থায় চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন কোমলমতি শিশু, বয়স্ক ও শিক্ষার্থীসহ এলাকার জনসাধারণ।সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চুনতি ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের পশ্চিম সুফিনগর, ঘোনার আগা, মিরিখিল, রোশাইঙ্গা ঘোনা সহ বিভিন্ন জায়গায় ক্ষতিকর তামাক চাষ করা হয়েছে। এছাড়াও জনবসতি ও সংরক্ষিত অভয়ারণ্যে বন ঘেঁষে বিষাক্ত তামাক চাষ করা হয়েছে। যেখানে বন্যপ্রাণীদের বিচরণ সেখানে এখন বিষাক্ত তামাক চাষে ভরপুর। ওই এলাকার অনেকেই জানেন না যে, তামাক চাষে কুফল ও তার ক্ষতিকর প্রভাবের কারণ কি হতে পারে। এছাড়াও তামাক চাষে কৃষকদের নিরোৎসাহিত করতে স্থানীয় কৃষি বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন কোনও কার্যক্রম নেই বলে অভিযোগ স্থানীয় সচেতন মহলের। এদিকে অতিরিক্ত মুনাফার আশায় জমির মালিক এসব ফসলি জমি গুলোতে তামাক চাষের জন্য জমিগুলো কোম্পানির সাথে কিছু অর্থের বিনিময়ে চুক্তি করে নেন। এতে পুরোধমে চালিয়ে যাচ্ছে এ বিষাক্ত তামাক চাষ। এই অবস্থায় চরম স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে দিন কাটাচ্ছে এলাকার শিশু, বয়স্ক সহ জনসাধারণ। অন্যদিকে কমে যাচ্ছে কৃষি জমির উর্বরতা। হারিয়ে যাচ্ছে প্রাকৃতির সৌন্দর্য, নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। ইতোমধ্যে স্কুল, মাদ্রাসা ও মসজিদ সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে এসব ক্ষতিকর তামাক প্রক্রিয়া যজ্ঞ এবং পুড়ানোর জন্য ৬-৭ টি টন্ডুল স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে বনের গাছ পুড়ানো হচ্ছে। সম্প্রতি সময়ে সেখান থেকে বনবিভাগ কিছু গাছ জব্দও করেন।জানা গেছে, কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার একটি সিন্ডিকেট চক্র স্থানীয় এক ব্যক্তির সহযোগিতায় জমির মালিকদের সাথে বিভিন্ন ভাবে লোভ দেখিয়ে কিছু অর্থের বিনিময়ে তাদের কাছথেকে জমি গুলো হাতিয়ে নে। যে জমি গুলোতে কৃষক’রা পূর্বে থেকে নিয়মিত ধান চাষ সহ বিভিন্ন ধরনের কৃষি ক্ষেত করে আসছিলো সে কৃষি জমিগুলোতে এখন ক্ষতিকর তামাক চাষে ভরপুর। সম্প্রতি সময়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চক্র তাদের কাছথেকে জমিগুলো বিষাক্ত তামাক চাষ করার জন্য চুক্তি করে নে। সেখানে করা হয়েছে বিষাক্ত এই তামাক চাষ। তামাক চাষে একদিকে যেমন বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি সহ বিভিন্ন রোগব্যাধি, তেমনি অন্যদিকে কমছে এসব কৃষি জমির উর্বরতা। এছাড়াও সেখানে সংরক্ষিত বন তো আছেই, বাদ পড়েনি জনবসতি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও।তামাক চাষের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা জানান, কৃষি জমিতে তামাক চাষ করলে কোন ধরনের ক্ষতি হয় সে বিষয়ে তারা কোন কিছুই জানে না। জমিতে তামাক চাষ করে তারা কোনও রকম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন না এবং কৃষি অফিসের লোকজনও চাষ করতে তাদেরকে নিষেধ করে নাই। তবে কোম্পানির সাথে চুক্তি করে এই তামাক চাষ করা হচ্ছে বলেও জানান তারা।এলাকার পরিবেশ সচেতন ব্যক্তিরা বলেন, যখন তামাক শোধনের জন্য চুল্লিগুলোতে আগুন দেওয়া হয়, তখন আর কেউ বাড়িতে থাকতে পারে না। দিনের বেলায় অন্যত্র আশ্রয় নিলেও রাতের বেলায় ঘুম হারাম হয়ে যায়। প্রচণ্ড ধোঁয়া আর তামাকের নিকোটিনের গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসে। ইতোমধ্যে গ্রামের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।তবে চিকিৎসকরা বলছেন, তামাক চাষ অবশ্যই ক্ষতিকর। তামাক চাষ যে এলাকায় করা হয়, ওই এলাকার শিশু, বৃদ্ধসহ সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেশি হয়ে থাকে। তাই তামাক চাষ জনবসতি সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে না করার পরার্মশ দেন তারা।

এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাজমুন লায়েল জানান, খোঁজ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।এদিকে পরিবেশ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম জেলা কার্যলয়ের উপপরিচালক মো: ফেরদৌস আনোয়ার জানান, চুল্লী স্থাপন করে তামাক পুড়ানোর বিষয়ে আমরা অবগত না। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম জেলা কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আবদুচ ছোবহান জানান, তামাক চাষ স্বাস্থ্যের জন্য অবশ্যই ক্ষতিকর। কোম্পানির সাথে চুক্তি করে তারা তামাক চাষ করে যাচ্ছে। তাছাড়া ক্ষতিকর তামাক চাষে কৃষকদের নিরোৎসাহিত করতে নানা ভাবে কাজ করে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *