চট্টগ্রামে সাংবাদিক আকাশকে অপহরণ করে ১০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ আদায়, মামলার মূল হোতা কাউছার মুন্সি সহ দুইজন আটক, জব্দ প্রাইভেট গাড়ী

চট্টগ্রামে সাংবাদিক আকাশকে অপহরণ করে ১০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ আদায়, মামলার মূল হোতা কাউছার মুন্সি সহ দুইজন আটক; জব্দ প্রাইভেট গাড়ী

জমির উদ্দিন, চট্টগ্রাম

গত ১১জুন চট্টগ্রাম মহানগরীর বায়েজিদ থানাধীন বালুচরা এলাকার তুফানি রোডের শেষ অংশের রাস্তার মাথার বিশ্বাস বাড়ি সংলগ্ন কালভার্টের পাশ থেকে সন্ধ্যা ৬ টায় সংঘবদ্ধ পেশাদার সন্ত্রাসী দলের একটি চক্রের হাতে অপহরণ হওয়া সিনিয়র সাংবাদিক ও দি বাংলাদেশ টুডে’র চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান এস এম আবুল বরকত আকাশ,প্রকাশ; এস এম আকাশ এর দায়ের করা চাঞ্চল্যকর মামলায় (মামলা নং ২৪/২৬৬) সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী দলের মূল হোতা মোস্তফা কাউছার মুন্সি (৪২) পিতা- ফতেহুল কদির ও সংঘবদ্ধ দলের আরেক সহযোগী আলী রাজ (২৮) পিতা- মাহবুবুল আলম কে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের বায়েজিদ থানার চৌকস টিমের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে শুক্রবার ১৪ জুন ভোরে গ্রেফতার করে।

অভিযানকালে তাদের কাছ থেকে জোর করে নেয়া কিছু স্বাক্ষর করা খালি নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প,বেআইনী ভাবে ছবি ও ভিডিও ফুটেজ ধারণ করা মোবাইল ফোন ও অপহরণ কালিন সময় ব্যবহার করা ফিল্ডার মডেলের কালো কাচের কালো রঙের প্রাইভেট গাড়ি (চট্রমেট্রো গ ১২- ৯৭৭০) জব্দ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার ১৩ জুন রাতে শুরু হয় শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান। রাতভর চলা এই অভিযানে ভোররাতে প্রথমেই আটক হয়
রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ৮নং পোমরা ইউনিয়নস্থ লিয়াকত আলী ভবন থেকে মোস্তফা কাউছার এর পরে ভোর রাতে (১৪ জুন শুক্রবার) আটক হয় রাউজান উপজেলার শেখ পাড়া আলী মিয়া মেম্বার বাড়ি পাহাড়তলীর বাসা থেকে আলী রাজ কে আটক করে পরে তাদের দুইজন কে নিয়ে আরও ৫/৬ জন অপহরণে জড়িত সহযোগীদের আটক করতে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করে বায়েজিদ থানার সিনিয়র সাব ইন্সপেক্টর রাজিব পাল এর নেতৃত্বে চৌকস টিম। পরে আসামিদের তথ্য মতে অপহরণকালিন সময়ে ব্যবহার হওয়া প্রাইভেট গাড়িটি উদ্ধার করে।

ঘটনা ও গ্রেফতার প্রসঙ্গে বায়েজিদ থানার অফিসার্স ইনচার্জ ওসি সনজয় কুমার সিনহা বলেন,সাংবাদিক এস এম আকাশ এর দায়ের করা মামলার এজাহার মোতাবেক আমরা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করি,মামলা দায়ের করার কয়েক ঘন্টার মধ্যে বায়েজিদ থানার সিনিয়র অফিসাররা অভিযানে নেমে পড়ে এবং গ্রেফতার করা হয় মোস্তফা কাউছার মুন্সি ও আলী রাজ নামের দুইজন আসামী একইসাথে জব্দ করা হয়েছে কিছু স্ট্যাম,মোবাইল ও প্রাইভেট গাড়ি। গ্রেফতারকৃত আসামিদের জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
একই প্রসঙ্গে মামলার বাদী সাংবাদিক এস এম আকাশ গণমাধ্যমকে বলেন,বায়েজিদ থানার অফিসার্স ইনচার্জ ওসি ও সংশ্লিষ্ট অফিসারদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। খুব দ্রুত আমার অপহরণকারীদের আটক করে যে বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। আমি আশা করছি বায়েজিদ থানার এই চৌকস টিম আত্ম গোপনে থাকা বাকি সন্ত্রাসীদেরকেও খুব দ্রুত আটক করতে পারবে।
সাংবাদিক অপহরণের ঘটনাার তিব্র প্রতিবাদ জানাতে এসে সিনিয়র সাংবাদিক ও জনপ্রিয় সাপ্তাহিক “দি ক্রাইম” পত্রিকার সম্পাদক আশিষ চন্দ্র নন্দি বলেন,অনাকাঙ্ক্ষিত ও পরিকল্পিত এই অপহরণের ঘটনার জন্য তিব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। দেশের প্রশাসন ও বিচার বিভাগের কাছে সাংবাদিক সমাজের আহবান আমাদের এই সহকর্মী এস এম আকাশ সহ দেশব্যাপী সাংবাদিক নির্যাতনের সকল ঘটনার ন্যায় বিচার নিশ্চিত করুন।
দৈনিক নতুন সময় এর নির্বাহী সম্পাদক খালেদ সুজন এক বিবৃতিতে জানান,এই ঘটনার জন্য আমরা সম্পাদক সমাজ মাননীয় তথ্য প্রতিমন্ত্রীর সাথে দেখা করে বিষয় টা গুরুত্বের সাথে বিচার নিশ্চিত করার আহবান জানাবো।
দি বাংলাদেশ টুডে এর প্রধান বার্তা সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ভুট্টো তার প্রতিক্রিয়ার জানান,এস এম আকাশ আমাদের বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান তার সাথে ঘটে যাওয়া এমন অপহরণ ও শারীরিক নির্যাতনের বিচার নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও বিচার বিভাগের কাছে আহবান জানাচ্ছি। দৈনিক আমাদের নতুন সময় এর চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান কামাল পারভেজ বলেন,আমরা সাংবাদিকরা জাতির বিবেক হয়েও যে সম্পূর্ণ অনিরাপদ তা এস এম আকাশ এর অপহরণের ঘটনাই প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই। দৈনিক সময়ের কাগজ এর সহ সম্পাদক নুর মোহাম্মদ রানা বলেন, সাংবাদিক এস এম আকাশ চট্টগ্রামের জনপ্রিয়,সাংগঠনিক ও দায়িত্বশীল সিনিয়র গণমাধ্যমকর্মী তার সাথে এমন ঘটনা হওয়ায় সাংবাদিক সমাজ চিন্তিত। সাংবাদিকরা যদি নিরাপত্তার সংকটে ভুগে তাহলে সাধারণ মানুষের হয়ে কিভাবে আমরা কথা বলবো।আমাদের কলম বন্ধ করতে এত এত ঘটনা হচ্ছে যা সত্যিই লজ্জাজনক।

উল্লেখ; গত ১১ জুন মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ থানাধীন এলাকা থেকে দি বাংলাদেশ টুডে এর চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান এস এম আকাশকে সশস্ত্র অবস্থায় মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে এবং অনাদায়ে খুন ও গুম করার মানসিকতা নিয়ে অপহরণ করে। ৩০ ঘন্টা ব্যাপী গোটা লোমহর্ষক অপহরণ কালিন সময়ে তাকে সংঘবদ্ধ দলের প্রায় ১২/১৪ জন অপহরণকারীরা পাহাড়ি এলাকায় নির্জন ভবনে নিয়ে গিয়ে রড,চাইনিজ কুড়াল,দেশীয় অস্ত্র,দেহ ব্যবসায়ী নারী,দেশীয় পিস্তল ইত্যাদি দিয়ে মারধর ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে থাকে।পরে তার পরিবারকে ডেকে এনে অপদস্ত করে নগদ ৭ লাখ ও মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে সাড়ে তিন লাখ টাকা এবং বিভিন্ন অংকের ৫টি চেক ও ১৮টি স্বাক্ষর নেয়া খালি নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প আদায় করে প্রায় ৩০ ঘন্টা পর মুক্তিপণ আদায়ের শর্ত সম্পন্ন করে ১৩ জুন বৃহস্পতিবার গভীর রাতে নির্জন রাস্তায় মোটরসাইকেলে করে নিয়ে এসে নামিয়ে দেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *