চট্টগ্রামে সাংবাদিক আকাশকে অপহরণ করে নির্যাতন ;৩০ ঘন্টা পর মুক্তিপণ আদায় করে মুক্তি

চট্টগ্রামে সাংবাদিক আকাশকে অপহরণ করে নির্যাতন ;৩০ ঘন্টা পর মুক্তিপণ আদায় করে মুক্তি

জমির উদ্দিন, চট্টগ্রাম

অপহরণের ৩০ ঘণ্টা পর উদ্ধার লোহাগাড়ার কৃতি সন্তান সাংবাদিক ও দেশের স্বনামধন্য ও শীর্ষ জাতীয় ইংরেজি দৈনিক দি বাংলাদেশ টুডে এর চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান এস এম আবুল বরকত আকাশ, প্রকাশ এস এম আকাশ।

গত ১২ জুন রাত আনুমানিক পনে বারোটায় রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পোমরা ইউনিয়নের সৌদিয়া গেইট সংলগ্ন একটি নির্দিষ্ট স্থানে রেখে গিয়েছিলো অপহরণকারীরা।

৩০ ঘন্টা ব্যাপী গোটা লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ভুক্তভোগী সাংবাদিক এস এম আকাশ গণমাধ্যমকে পাঠানো তাৎক্ষণিক এক সংবাদ বিবৃতিতে জানান,চট্টগ্রাম মহানগরীর বায়েজিদ থানাধীন বালুচরা এলাকার তুফানি রোডের শেষ অংশের রাস্তার পাশ থেকে গত ১১ জুন মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬ টায় সংঘবদ্ধ পেশাদার সন্ত্রাসী দলের একটি চক্র সশস্ত্র অবস্থায় মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে এবং অনাদায়ে খুন ও গুম করার মানসিকতা নিয়ে তাকে অপহরণ করে।

কারা তাকে নিয়ে যেতে পারেন বা কী কারণে তাকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।এ বিষয়ে তাঁর সংবাদ বিবৃতি সূত্রে জানা যায় , সাংগঠনিক ভাবে পরিচিত মোহাম্মদ আলী নামের এক ছোট ভাই এর আহবানে বালুচরা এলাকায় কেনার জন্য একটি জমি দেখতে যান তিনি । ঠিক তখনই গোপনে লুকিয়ে থাকা ৮/১০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল তাকে হামলা করে এবং তিনি যখন তাদের হাত থেকে বাঁচতে চেষ্টা করি তখন তারা মারধর করে জোর পূর্বক ফিল্ডার মডেলের কালো কাচের ও কালো রঙের একটা প্রাইভেট গাড়িতে তুলে নাকে মূখে কাপড় বেঁধে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায় তাকে । বিস্তারিত বিবরণ দিতে গিয়ে এস এম আকাশ আরও জানান,গাড়ি থেকে নেমে দেখতে পাই গহীন অন্ধকার ও নীরব বিলের মাঝে অবস্থিত একখানা সবুজ রঙের বিল্ডিং এ নিয়ে যাওয়া হয় তাকে।

যার দোতলায় একটি কক্ষে নিয়ে তাকে প্রথমে চেয়ারে সাথে বেঁধে রাখে এর পর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে।
রড,চাইনিজ কুড়াল,দেশীয় অস্ত্র,দেহ ব্যবসায়ী নারী,দেশীয় পিস্তল ইত্যাদি দিয়ে মারধর ও ভয়ভীতি প্রদর্শন বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।এমনকি

সংঘবদ্ধ দলের প্রায় ১২/১৪ জন অপহরণকারী দল গোটা এই অপরাধের সাথে যুক্ত ছিল বলেও জানান তিনি । মূলত এই দলের মূল নেতা কথিত জমির মুন্সি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পোমরা ইউনিয়নের বাসিন্দা মোস্তফা কাউছার মুন্সির নেতৃত্বে গোটা অপহরণ কর্মযজ্ঞটি পরিচালনা করে বলে ভুক্তভোগী সাংবাদিক এস.এম আকাশ জানান ।

 

কীভাবে তিনি উদ্ধার হয়েছেন
সে বিষয়ে সাংবাদিক এস এম আকাশ তাঁর সংবাদ বিবৃতিতে আরও জানান, অপহরণের ২য় দিন (১২ জুন) তিনি বুঝতে পারেন যে এটা একটা পাহাড়ি এলাকা এবং ঐ দিন সকালে তারা আগের দিনের কালো ফিল্ডার গাড়িতে তুলে আরও গভীর জঙ্গলে নিয়ে যায় তাকে। যাওয়ার সময় তিনি রাস্তার বিভিন্ন সাইনবোর্ড ও দোকানপাটের সাইনবোর্ডে দেখতে পান কখনো রাউজান কখনো রাঙামাটি ও কখনো রাঙ্গুনিয়ার গভীর বনাঞ্চল এলাকা। ২য় দিন দুপুরে তাঁর মোবাইল ফোন থেকে ভুক্তভোগী সাংবাদিক পরিবারের সদস্যদের সাথে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে কথা ও যোগাযোগ শুরু করে এবং তাঁর ভাই ও স্ত্রীকে বলে,কাউকে অবগত না করার জন্য। এমনকি থানা পুলিশকেও না বলার জন্য। একপর্যায়ে ৫০ লাখ টাকা ও চেক বই নিয়ে আসতে বলে পরিবারের সদস্যদের। যদি থানা পুলিশ করে তবে সাংবাদিক আকাশ কে জীবিত পাবে না বলে হুমকি দেয়।যদি কাউকে বলে শরীরের অংশ খুজে পাবে বলে ভয় দেখায়। এক পর্যায়ে তাঁর স্ত্রী ও ভাই জীবনের মায়া ত্যাগ করে অপহরণকারীদের দেওয়া ঠিকানায় ৩ ঘন্টা ঘুরাঘুরি করে উপস্থিত হয়।

মানবতাহীন সন্ত্রাসীরা তাঁর ভাই ও স্ত্রীকেও বিভিন্ন ভাবে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করতে থাকে। এক পর্যায়ে পরিবারের আকুল মিনতিতে নগদ ৭ লাখ ও অনলাইন ব্যাংকিং এর মাধ্যমে সাড়ে তিন লাখ টাকা আদায় করে,পাশাপাশি তাঁর স্বাক্ষরিত বিভিন্ন অংকের মোট ৫৮ লাখ ৫০ হাজার টাকার তারিখ বিহীন ৪টি চেক নেয় এবং তাঁর স্ত্রী ডলি করিমের ব্যক্তিগত হিসাবের একাউন্ট এর একটি ৫০ লাখ টাকার চেক জোর পূর্বক গ্রহণ করে। সাথে ১০০ টাকা দামের ১৮টি খালি স্ট্যাম্পে তাঁর স্ত্রী,তাঁর ভাই ও ভুক্তভোগীর স্বাক্ষর নেয় এরপর তারা তাকে জোর করে অস্ত্রের মুখে রেখে মোবাইলে স্বীকারোক্তি মূলক ভিডিও ফুটেজ ধারণ করে।

এছাড়াও ভুক্তভোগী সাংবাদিক কে তাদের শিখিয়ে দেয়া বক্তব্য মতে যা যা বলতে বলে তাই বলেন বলে জানান তিনি ।পরিশেষে “আমি প্রতারক” শব্দটা কাগজে প্রিন্ট লিখে তাঁর স্ত্রী ভাইকে আঘাত করবে বলে ভয় দেখিয়ে থানার আসামীদের মতো করে ছবি তোলে।

সবশেষে অসুস্থ ও আঘাত প্রাপ্ত শরীর নিয়ে বহু কষ্টে ১৩ জুন রাত আনুমানিক ২টায় চট্টগ্রাম শহরে এসে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এসে জরুরী বিভাগে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা ও ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা করে উপস্থিত চিকিৎসকদের মানবিক সহায়তায় পুলিশ কেইস করার সনদ প্রদান করে। এমতবস্থায় চট্টগ্রামের সিনিয়র গণমাধ্যম কর্মীদের সহযোগিতায় আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান ভুক্তভোগী এই সাংবাদিক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *