কক্সবাজার সৈকতে ফের ভেসে এলো অসংখ্য নতুন প্রজাতির মৃত জেলিফিশ

কক্সবাজার সৈকতে ফের ভেসে এলো অসংখ্য নতুন প্রজাতির মৃত জেলিফিশ

হাফিজুর রহমাজ খান, স্টাফ রিপোর্টার (কক্সবাজার) :: কক্সবাজার সৈকতে ফের ভেসে এলো শত শত মৃত জেলিফিশ। আজ বুধবার (২৯ মার্চ) সন্ধ্যা ৬টার দিকে শহরের কলাতলী পয়েন্ট সৈকতে সামুদ্রিক জোয়ারের সাথে এসব মরা জেলিফিশ ভেসে আসে।

এর আগে গত বছরের বিভিন্ন সময়েও এভাবে শত শত মরা জেলিফিশ ভেসে আসতে দেখা যায়। তবে এবার ভেসে আসা জেলিফিশের জাতটি ভিন্ন বলে জানান বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউটের (বোরি) মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ও সমুদ্রবিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর।

তিনি বলেন, “আজ বুধবার (২৯ মার্চ) সন্ধ্যা ৬টার দিকে শহরের কলাতলী পয়েন্ট সৈকতে ফের জেলিফিশ ভেসে আসার খবর পেয়ে বোরি’র কুইক রেসপন্স টিমের বিজ্ঞানীরা ঘটনাস্থলে যান এবং প্রজাতি শনাক্তের জন্য নমুনা সংগ্রহ করেন। কক্সবাজার সৈকতে এবারই প্রথম এই জাতের জেলিফিশ ভেসে আসতে দেখা যায়। এর আগে পটুয়াখালীতেও এই জাতের জেলিফিশ ভেসে আসার খবর পাওয়া যায়।”

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও জেলা প্রশাসনের বীচকর্মী মাহবুব আলম বলেন, “বুধবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে সামুদ্রিক জোয়ারে হঠাৎ শত শত মরা জেলিফিশ ভেসে আসতে দেখা যায়। এর আগে গত বছর ৩ ও ৪ আগস্ট, ১১ ও ১৩ নভেম্বর এবং ৩ ডিসেম্বরও এভাবে শত শত মরা জেলিফিশ ভেসে আসে।”
জেলিফিশ স্থানীয়ভাবে ‘নুইন্না’ নামে পরিচিত। শত শত বছর ধরেই কক্সবাজার সৈকতে ভেসে আসছে জেলিফিশ বা ‘নুইন্না’; আর অযত্ন-অবহেলায় পচে-গলে সৈকতের মাটিতেই নিঃশেষিত হয়ে যাচ্ছে এই সামুদ্রিক প্রাণিটি। অথচ খাদ্য হিসাবে এবং ওষুধ ও প্রসাধন তৈরিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জেলিফিশের বহুল ব্যবহার রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে এক কেজি জেলিফিশের দাম ১০ ডলার বা প্রায় ১১শ’ টাকা। আর আমাদের দেশে জেলিফিশের শেষ পরিণতি সৈকতের পোকা-মাকড়ের খাদ্য হিসাবে!
বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউটের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও কুইক রেসপন্স টিমের বিজ্ঞানী তরিকুল ইসলাম ঘটনাস্থল থেকে জানান, গত বছর ভেসে আসা জেলিফিশটি ছিল ‘লবণেমইড্স রোবাস্টাস’ প্রজাতির এবং এগুলোর একেকটির ওজন ছিল ১০ কেজি থেকে ৬০ কেজি পর্যন্ত। তবে এবার ভেসে আসা জেলিফিশটির ওজন ২শ’ থেকে ৩শ’ গ্রামের মধ্যে।”

সম্প্রতি কক্সবাজার সৈকতে শত শত মৃত জেলিফিশ ভেসে আসার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞানীরা এমন চমকপ্রদ তথ্য জানতে পারেন। এখন এ জেলিফিশকে নিয়েই দেশের সুনীল অর্থনীতিতে নতুন দিগন্ত উম্মোচনেরও স্বপ্ন দেখছেন তারা।

বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউটের (বোরি) মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ও সমুদ্রবিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর বলেন, বিশ্বে অন্তত দুই হাজার প্রজাতির জেলিফিশ রয়েছে যেগুলোর মধ্যে ১২-১৩টি প্রজাতি খাওয়ার উপযোগী। আর এসব প্রজাতির মধ্যে একটি হলো ‘ধলা নুইন্যা’ বা হোয়াইট টাইপ জেলিফিশ যেটি কক্সবাজারসহ দেশের অন্যান্য উপকূলজুড়ে ব্যাপকভাবে পাওয়া যায়।

তবে আজ বুধবার পাওয়া জেলিফিশটি কোন প্রজাতির এবং এর খাদ্য ও ঔষধী গুণ কী এ বিষয়ে গবেষণা করবেন বিজ্ঞানীরা।

বিজ্ঞানীরা জানান, ডাইনোসর যুগেরও আগের প্রাণি জেলিফিশ। পৃথিবীতে এদের আবির্ভাব প্রায় ৫০ কোটি বছর আগে। তবে ইংরেজি নামে মাছ হিসাবে অভিহিত করা হলেও জেলিফিশ আসলে কোনো মাছ নয়। এটি একটি অমেরুদণ্ডী প্রাণী যার কোনো হৃদপিণ্ড নেই। প্রাণীটি অ্যাকুরিয়ামে পর্যটকদের বিনোদনেও ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *