দুপচাঁচিয়ার মন্দিরে চুরির ঘটনার রহস্য ২৪ ঘন্টার মধ্যে উদঘাটন করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে স্বস্তি ফিরিয়ে আনল পুলিশ
মোঃআব্দুস ছালাম মীর নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ
দুপচাঁচিয়ার মন্দিরে চুরির ঘটনার রহস্য ২৪ ঘন্টার মধ্যে উদঘাটন করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে দুপচাঁচিয়া থানা পুলিশ।
প্রেস রিলিজ হতে জানা যায়,
গত ৩১ মার্চ দিবাগত রাত্রে দুপচাঁচিয়ার চেঙ্গা পালপাড়া শ্রী শ্রী দয়াময়ী কালীমাতা মন্দিরে চুরির ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে উক্ত মন্দির কমিটির সভাপতি জীবন চন্দ্র পাল গত ১লা এপ্রিল মামলা করেন। নিয়মিত মামলা রুজু হলে ব্যাপক পুলিশি তৎপরতা শুরু করে দুপচাঁচিয়া থানা পুলিশ। মামলা রুজুর ২৪ ঘন্টার মধ্যে চুরির রহস্য উদঘাটন করতঃ ঘটনায় জড়িত ০২ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেন এবং গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের হেফাজত হইতে চুরি যাওয়া স্বর্ণের চুড়ি উদ্ধার করেন।
গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিরা হলেন দুপচাঁচিয়া থানার ছোটধাপ গ্রামের মৃত মোসলেম প্রাং এর পুত্র মোঃ সেলিম প্রাং(৩৮) এবং কাহালু থানার জাঙ্গালপাড়া গ্রামের মৃত ইসাহাক আলীর পুত্র মোঃ এমরান খন্দকার(২৪)।
গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদ্বয় গত ৩১ মার্চ দিবাগত রাত্রী ১১.০০ ঘটিকার দিকে চুরির উদ্দেশ্যে বাহিরে বের হয়ে ঘুরতে ঘুরতে তারা চেঙ্গা পালপাড়া গ্রামস্থ শ্রী শ্রী দয়াময়ী কালীমাতা মন্দিরে যান। সেখানে মন্দিরের বারান্দায় দান বাক্স দেখে তারা প্রথমে উক্ত বাক্সের তালা হেস্কো বেøড দিয়ে কেটে বাক্স থেকে নগদ ১,০০০/-টাকা চুরি করেন। যেগুলোর মধ্যে ০৩টি ১০০ টাকার নোট, ০২টি ৫০ টাকার নোট ও বাকি গুলো ১০ টাকা ও ২০ টাকার নোট। পরে তারা একটি বাঁশ দিয়ে মন্দিরের পিছনের গ্রিলের পাতি ভেঙ্গে মন্দিরের ভিতর প্রবেশ করে মন্দিরে রক্ষিত কালীমাতার প্রতিমার হাতে থাকা ০৩টি স্বর্ণের চুড়ি চুরি করে নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় ১০০০/-টাকা উভয়ে ৫০০ টাকা করে এবং গ্রেফতারকৃত সেলিম একটি চুড়ি ও এমরান দুইটি চুড়ি ভাগাভাগি করে নেয়।
গ্রেফতারকৃত সেলিমের হেফাজত থেকে ০১টি চুড়ি উদ্ধার হয়। গ্রেফতারকৃত এমরানের হেফাজতে থাকা চুড়ি ০২টি এমরান তার বাড়ির পাশে নদীতে ফেলে দেয়। জিজ্ঞাসাবাদে এমরান পুলিশের নিকট দাবি করে যে, প্রতিমার হাত থেকে স্বর্ণে চুড়ি খুলতে গিয়ে সে দারুন ভাবে ভয় পেয়েছিল। এতে বাড়ি ফেরার পথেই তার প্রচুর জ্বর আসে। বাড়িতে ফিরে ভিষন অসুস্থ্য হয়। তখন তার মাকে ঘটনা খুলে বললে তার মা পাশের বাড়ির দাদিকে ডেকে ঝাড় ফুক করে নেন এবং স্বর্ণের চুড়ি গুলি নিয়ে গিয়ে নদীতে ফেলে দিতে বললে নদীতে ফেলে দেন।
গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদ্বয়কে ২ মার্চ দিবাগত রাত্রী ০৯.০০ ঘটিকার দিকে তাদের নিজ নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেছে দুপচাঁচিয়া থানা পুলিশ। গ্রেফতারের পর ঘটনার সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি তারা অকপটে স্বীকার করে। সেলিম গ্রেফতার হওয়ার পর তার হেফাজতে থাকা স্বর্ণের চুড়িটি তার বাড়ির বাক্স থেকে বের করে দেয়। এমরানের দেখানো মতে আজ সকাল বেলা ডিমশহর দক্ষিনপাড়া গ্রামের জনৈক ইয়াকুব আলীর পুকুরের পাড় থেকে দান বাক্সের তালা কাটার ব্লেড টি উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদ্বয় মাদক সেবি। সেলিম প্রাং এর বিরুদ্ধে ০৭টি মাদক ও চুরি মামলা এবং এমরান খন্দকার এর বিরুদ্ধে ০৩টি মাদক মামলার তথ্য থানার নথি পত্রে পাওয়া গেছে বলে পুলিশের নিকট থেকে জানা যায়।
থানার অফিসার ইনচার্জ জনাব মোঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, পুলিশ সুপার মহোদয় সহ জেলার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ সার্বক্ষনিক তদন্ত কার্যক্রম তদারকি করায় ২৪ ঘন্টার মধ্যে ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়েছে। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদেরকে নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদ করে চুরি যাওয়া অবশিষ্ট মালামাল উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। আজ তাদেরকে বিজ্ঞ আদালতে উপস্থাপন করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে বগুড়া জেলার পুলিশ সুপার জনাব সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বিপিএম, পিপিএম বলেন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে চুরি ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে অস্বস্তি বিরাজ করছিল। তাদেরকে স্বস্তি ফিরিয়ে দিতে জেলা পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মামলা তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করায় স্বল্পতম সময়ে এই সফলতা অর্জিত হয়েছে। গ্রেফতারকৃত অপরাধীরা যাতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পায় সে বিষয়ে জেলা পুলিশ সকল ধরনের পদক্ষেপ গ্রহন করবে। ধর্মীয় সম্প্রতি সৌহার্দ্য যাতে বজায় থাকে সে জন্য বগুড়া জেলা পুলিশ সর্বদা তৎপর রয়েছে।
প্রেস ব্রিফিং করেন বগুড়া জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার( প্রশাসন) জনাব স্নিগ্ধ আকতার,এ সময় উপস্থিত ছিলেন এ এস পি জনাব নাজরান রউফ, দুপচাঁচিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃআবুল কালাম আজাদ, ওসি (তদন্ত) মোঃ আব্দুর রশিদ, দুপচাঁচিয়া। এ ছাড়া প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক গন উপস্থিত ছিলেন।