ডুলাহাজারা কলেজের অধ্যক্ষ ও সভাপতির বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

ডুলাহাজারা কলেজের অধ্যক্ষ ও সভাপতির বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

হাফিজুর রহমান খান, কক্সবাজার:: চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ পুনরুজ্জীবিত হলো। কক্সবাজার জেলাধীন চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষের বিরূদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ ওঠেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গভর্নিং বডির সদস্য এবং কলেজে কর্মরত অধ্যাপকদের তথ্য সূত্রে এই অভিযোগ প্রতিবেদনটি ছাপানো হয়। কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে। এমপিও ভূক্ত হয় মে, ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে। কলেজের অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরীর চাকরির মেয়াদ শেষ হয় গত ১১ মে, ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে। ইতোমধ্যে তিনি কল্যাণ ট্রাস্টের সমুদয় টাকা উত্তোলন করেছেন। অবসর ভাতার টাকা উত্তোলনের প্রক্রিয়াও শেষ পর্যায়ে।

অভিযোগে বলা হয়, অধ্যক্ষ স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী পরিবারের সন্তান। গভর্নিং বডির সভাপতি ও সদস্যগণ স্থানীয় এবং আত্মীয় ও বন্ধু বলয়ের লোক হওয়ায় তিনি অবসরে যাওয়ার পূর্বেই বিধি মোতাবেক কোন শিক্ষক কে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব না দিয়ে গভর্নিং বডিকে প্রভাবিত করে কলেজ ফান্ড থেকে ৫০,০০০/ পঞ্চাশ হাজার টাকা বেতনে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালনের এক্সটেনশনের সিদ্ধান্তটি এই শর্তে পাশ করিয়ে নেন যে, অবসরোত্তর অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনের বিষয়টি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হতে অনুমোদন এনে দেবেন। কিন্তু বিধি বহির্ভূত হওয়ায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অদ্যাবধি উক্ত এক্সটেনশন অনুমোদন প্রদান করেননি।

অধিকন্তু বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুরূপ জটিলতার জট সৃষ্টি হলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় / মাউশি কর্তৃপক্ষ উপাধ্যক্ষ/ জ্যৈষ্ঠ সহকারী অধ্যাপক জ্যৈষ্ঠ প্রভাষক/সহকারী প্রধান শিক্ষক/জ্যৈষ্ঠ শিক্ষককে দায়িত্ব হস্তান্তর করার বিষয়ে পরিপত্র জারি করেন। স্মারক নম্বর (ওএম / ৭৪ / ম/১৪-১২১২। তারিখ- ১২/০৬/২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ।) তিনি অনিয়মতাত্রিকভাবে বিভিন্ন আর্থিক সুবিধার পাশাপাশি ২৯ মাসে কলেজ তহবিল হতে ১৪,৫০০০/ চৌদ্দ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা বেতন-ভাতা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। বিশেষ করে ২০১৮ সালের পর থেকে ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখের মধ্যে নানান অনিয়মের মাধ্যমে কলেজের ফান্ড উজাড় করেছেন। কোভিড-১৯ চলা কালে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড ডুলাহাজারা শাখায় কলেজের নামীয় জয়েন্ট একাউন্ট হতে সভাপতির স্বাক্ষর বিহীন একক স্বাক্ষরে ২২,০০,০০/ বাইশ লক্ষ টাকা উত্তোলন করে স্বনামে বেনামে ব্যয় করেছেন। যা পরবর্তী গভর্নিং বডির সভাপতি অনুমোদন করেননি। ২০১৫ সালে ডিগ্রি পর্যায়ে নিয়োগ দেওয়া নন এমপিও ভূক্ত শিক্ষকদের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তির শর্তানুযায়ী ৯ম গ্রেডে ২২,০০০/ টাকা প্রাতিষ্ঠানিক বেতন-ভাতা প্রদান না করে নামে মাত্র অর্ধেকেরও কম বেতনে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বেতন ভাতা প্রদান করে কথিত অধ্যক্ষ ও গভর্নিং বডির সভাপতি আত্মসাত করে।

পক্ষান্তরে এমপিও ভুক্ত শিক্ষকদের প্রভাষক পদ হতে প্রাতিষ্ঠানিক সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি এবং প্রাতিষ্ঠানিক সহকারী অধ্যাপক পদ হতে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি প্রদান করে ২৫,০০০/ পঁচিশ হাজার বা ততোধিক টাকা পর্যন্ত বেতন ভাতা প্রদানের সিদ্ধান্ত কার্যকর করে কলেজের তহবিল শূন্য করে দেন। কলেজের ছাত্রাবাস নির্মাণ দেখিয়ে ২০ বিশ লক্ষাধিক টাকা টেন্ডার বা কোটেশন না দিয়ে ব্যয় করেছেন। বিগত ১৪/১৫ বছর ধরে ৫০ সিট বিশিষ্ট ছাত্রাবাসের কোন আয়ের হিসাব কলেজ তহবিলে জমা না করে লোপাট করেছেন। সৃষ্ট পদে কিছু বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আর কিছু বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে পছন্দের অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক শম্ভু নাথকে যুক্তি বিদ্যা বিষয়ে, হাবিব উল্লাহকে অর্থনীতি বিষয়ে, ফাহিম শাহরিয়ারকে আইসিটি বিষয়ে, ফারজানা ইয়াছমিনকে ইংরেজী বিষয়ে নিয়োগ দিয়ে ল্যাব সহকারী ও কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে নিয়োগ বাণিজ্য করার অভিযোগ রয়েছে।

সম্প্রতি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের চাপে পড়ে তিনি অধ্যক্ষের দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও দূর্নীতি ঢাকা দেওয়ার জন্য জ্যৈষ্ঠতা লঙ্ঘন করে ৯ অক্টোবর সোমবার ২০২৩ তরিখে গভর্নিং বডির মেজরিটি সদস্যদের মেনেজ করে তাঁর আস্থাভাজন জুনিয়র শিক্ষক উত্তম কুমার চৌধুরী কে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব হস্তান্তর করেন।

এ বিষয়ে সত্যতা জানার জন্য কয়েকজন সাংবাদিক কলেজ প্রাঙ্গনে গেলে, অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন অর্থ দিয়ে সাংবাদিকদের বসে আনার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয় ৷ সাংবাদিকতা যেহেতু সত্য পথের সারথী, অর্থের কাছে বিক্রী না হয়ে যতটকু সত্য উৎঘাটন হয়েছে ততটুকু নিউজ করতে বাধ্য হয় ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *