আনোয়ারা সরকারী কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে একটি স্বার্থনেস্বী মহলের অপপ্রচারের অভিযোগ
আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
চট্টগ্রামের আনোয়ারা সরকারী কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে একটি স্বার্থনেস্বী মহলের অপপ্রচার করার অভিযোগ তুলেছেন অধ্যক্ষ মো: আব্দুল্লাহ আল মামুন। অভিযোগের ব্যাপারে তিনি তার ফেরি ভাই ফেসবুকে আনোয়ারাবাসী ও কলেজের শিক্ষক এবং ছাত্র ছাত্রীদের সত্যটি জানাতে একাধিক স্ট্যাটাস দেন। তিনি লিখেন
আনোয়ারা সরকারি কলেজের প্রিয় ছাত্র ছাত্র-ছাত্রী ও শ্রদ্ধেয় আনোয়ারা বাসি আসসালামু আলাইকুম। আনোয়ারা সরকারি কলেজে আমি যোগদানের দশ মাস দুই দিন পূর্ণ হলো। এর মধ্যে গত ১২দিন নিরাপত্তার অভাবে কলেজে যেতে পারছি না। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে বদলির অথবা ওএসডি করার আবেদনও করেছি। বদলি অথবা ওএসডি তো আমার ইচ্ছার উপর নির্ভর করে না। নির্ভর করে সরকারের ইচ্ছার উপর। আমার কলেজে না যাওয়ার সুযোগে একটা গোষ্ঠী তিলকে তাল বানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। তারা চায় না এ কলেজে কোনো বিসিএস ক্যাডার অধ্যক্ষ থাকুক।
আমি চলে যাব। কিন্তু আমার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের যে ভুল ধারণা দিচ্ছে তা দূর করা উচিত বলে মনে করি। একজন অধ্যক্ষের সকল হিসাব নিকাশের দায়বদ্ধতা মন্ত্রণালয়ের কাছে। কিন্তু আমি আমার প্রিয় শিক্ষার্থীদের জানিয়ে যাব। আজ জানাবো উন্নয়নের বিষয় একজন অধ্যক্ষ কখনও নিজ হাতে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করেন না। উন্নয়নমূলক কাজ করতে হলে নিয়মগুলো অনুসরণ করতে হয় (এক) একাডেমিক কাউন্সিল ও শিক্ষক পরিষদ অনুরোধ করেন উন্নয়ন কাজ করার জন্য।
(দুই) তখন অধ্যক্ষ একটি বাস্তবায়ন কমিটি করে দেন। এ কমিটির কাজ হচ্ছে পুরো উন্নয়নের বাজেট প্রণয়ন ও অর্থ উত্তোলনের মাধ্যমে পুরো কাজটি সম্পন্ন করা। অর্থ উত্তোলনের জন্য আবেদনও করেন বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক। টাকা আহ্বায়কই গ্রহণ করেন স্বাক্ষর দিয়ে। (তিন) উন্নয়নের কাজ শেষ হলে বাস্তবায়ন কমিটি সমস্ত খরচের হিসাব করে এবং সরকারি ভ্যাট ট্যাক্স জমা দিয়ে কলেজের নির্ধারিত অর্থ কমিটির কাছে জমা দেন। উল্লেখ্য ভ্যাট ট্যাক্স মোট খরচের সাড়ে দশ পার্সেন্ট। আনুষঙ্গিক ব্যয় আছে আরো পয়েন্ট পাঁচ পার্সেন্ট। সরকারি খাতে এগারো পার্সেন্ট চলে যায়। অর্থাৎ একশত টাকা তুললে খরচ করা যাবে ঊনানব্বই টাকা। ফটোকপি সংযুক্ত করা। (চার) অর্থ কমিটি সমস্ত খরচ যাচাই বাছাই করে ঠিক থাকলে স্বাক্ষর করে উপাধ্যক্ষ সাহেবকে দিবেন। (পাঁচ) উপাধ্যক্ষ আবার ও যাচাই বাছাই করে স্বাক্ষর করে অধ্যক্ষকে দেন।
(ছয়) এরপর অধ্যক্ষ অনুমোদন দেন। সাতজন স্বাক্ষরের পর আট নম্বরে অধ্যক্ষ অনুমোদন স্বাক্ষর করেন। (সাত) এরপর শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক বিষয়টি একাডেমিক কাউন্সিল ও শিক্ষক পরিষদের যৌথ সভায় উপস্থাপন করেন। সেখানে সকল শিক্ষক তার অনুমোদন দেন। একাডেমিক কাউন্সিল ও শিক্ষক পরিষদের যৌথ সভায় অনুমোদনের ফটোকপি সংযুক্ত করা হয়। তাহলে অধ্যক্ষের দূর্ণীর্তির করার কোন ভূমিকা বা সুযোগ কোথায়? তিনি হিসেবে কতোগুলো ভাউচার শেয়ার লিখেন, ভালো করে পড়ে ফটোকপি গুলো যাচাই বাছাই করবেন। ভাউচারে ও বাস্তবায়ন কমিটির স্বাক্ষর আছে। আমি যোগদান করার আগে কলেজটা কেমন ছিল? আর যোগদানের পর কলেজটা কেমন হয়েছে? আবার আমি চলে আসার পর আমার কলেজটা কেমন আছে? আপনারা বিচার করবেন। আমি ও সরকারি অডিট করার চেষ্টা করছি। আমার প্রিয় শিক্ষার্থীরা তোমরা ভালো থেকো আর আমার জন্য দোয়া করো।
একটা নমুনা কপি সংযুক্ত করলাম। স্বার্থনেস্বী মহল তিনটা অভিযোগ তুলেন অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে সেগুলো হলো, মার্কসিট বাবদ ৬শ’ টাকা করে নেওয়া হয়। ওই টাকা কলেজের একাউন্টে জমা হয়নি। অধ্যক্ষের ব্যক্তিগত একাউন্টে জমা করা হতো বলে অভিযোগ রয়েছে। কলেজে অধ্যক্ষের আলাদা বাসা থাকার পরও অফিস রুমে নতুন করে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। যা বিধি সম্মত নয়। কলেজের ১৮ জন শিক্ষক /কর্মচারী সরকারিকরণের প্রথম বেতন উত্তোলনের সময় নিয়ম বহির্ভূতভাবে টাকা দিতে হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে । এছাড়াও বিভিন্ন খাতে নেয়া প্রকল্পগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই তিন প্রশ্নের ব্যাপারে অধ্যক্ষ জবাবে লিখেন, একমাত্র অধ্যক্ষ হচ্ছে কলেজের আয়ন ব্যয়ন কর্মকর্তা। সরকারি কলেজের প্রত্যেক খাত আলাদা করার নিয়ম। প্রত্যেক ফান্ডে পরিচালনা করার ক্ষমতা অধ্যক্ষের। বেসরকারি এ খাতের প্রত্যেকটি টাকা ইউসিবিএল ব্যাংকে জমা আছে। দায়িত্ব হস্তান্তরের সময় পরবর্তী অধ্যক্ষের কাছে এ টাকার হিসাব বুঝিয়ে দেয়া হয়। এছাড়া এ টাকার হিসাব কলেজ অফিসের রেজিস্ট্রার এ লিপিবদ্ধ আছে। আনোয়ারা সরকারি কলেজে অধ্যক্ষের কোন সরকারি বাসা নেই। তাই বৈষম্য বিরুধী আন্দোলন চলার সময় পুলিশ অফিসার ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অনুরোধে অধ্যক্ষের রেষ্ট রুমে ৫/৬ দিন অবস্থান করতে হয়েছে বলে অভিযোগের জবাব দেন তিনি। এব্যাপারে অধ্যক্ষ মো: আব্দুল্লাহ আল মামুনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সুযোগ নিয়ে একটি স্বার্থনেস্বী মহল তিলকে তাল বানিয়ে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তিনি আরো জানান বর্তমানে তিনি নিরাপত্তার অভাবে কলেজ থেকে অব্যহতি চান বলেও জানান। একই সাথে তাহার দায়িত্ব পালনকারী সময়ের সকল আয় ব্যয় হিসাবের জন্য সরকারী অডিট করার চ্যালেঞ্জ করে নিজেকে নির্দোষ দাবী করেন।,
তিনি আরো জানান আগের (বেসরকারি আমলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ) কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেয়ার জন্য কিছু শিক্ষক ও বহিরাগত ১০/১৫ জন ছাত্রের সাহায্যে আমাকে কলেজ ত্যাগে বাধ্য করেন আমি কলেজের নিয়ম শৃঙ্খলার মাধ্যমে পড়ালেখার মান উন্নয়ন করে সেনানিবাসের কলেজগুলোর পর্যায়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছিলাম। তিনি আরও জানান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ঘোষণা দিয়েছেন কলেজে কোনো বিসিএস ক্যাডারের অধ্যক্ষ রাখবেন না। অধ্যক্ষের চেয়ারের মোহে তিনি নানা প্রকার মিথ্যা গুজব, অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন।