আনোয়ারায় দর্শনার্থীদের হাসির সাথে হাসছে সূর্যমুখী
আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা
সবুজের মাঠে জুড়ে সূর্যমুখীর মায়াবী হাসি, সূর্যমুখীর হলুদের আভায় জ্বলজ্বল করছে ফসলের মাঠ। এমনি হাজারো সূর্যমুখী ফুলের নজরকাড়া রূপের দেখা মিলবে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। ফসলের ক্ষেতে সবুজের মাঝে হলুদ ফুলের এমন নয়নাভিরাম দৃশ্য কাছে টানছে সৌন্দর্যপিপাসুদের। স্বল্প খরচে অধিক লাভজনক হওয়ায় পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হওয়া এই ফসল বাণিজ্যিক চাষের অপার সম্ভাবনার সুযোগ দেখছেন বলে জানান কৃষিকর্মকর্তা। এদিকে বছরের পর বছর কৃষকদের মাঝে বৃদ্ধি পাচ্ছে সূর্যমুখী চাষের আগ্রহ।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবার উপজেলার বৈরাগ, বারশত, ডুমুরিয়া, সরেঙ্গা, গহিরা, ঝিউরি, বরুমচড়া এলাকার সাড়ে ৩হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে। উপজেলা জুড়ে ২০জন সূর্যমুখী চাষের কৃষকের মাঝে বীজ, সার বিতরণ করা হয়েছে এবং প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে ১২জন কৃষককে।
সরেজমিনে এসব সূর্যমুখী ক্ষেত পরিদর্শন করে দেখা যায়, অনেকেই আমন ধান ঘরে তুলে সেই জমিতেই সূর্যমুখীর চাষ করেছে। আবার অনেকেই নতুন জমিতে এই ফসলের চাষ করেছে। প্রায় সব সূর্যমুখী ক্ষেতেই ফুলগুলো বড় হয়েছে। আর অল্পকিছুদিনের মধ্যেই ফুল থেকে বীজ সংগ্রহ করা হবে৷ এদেকে সূর্যমুখীর রূপে আকৃষ্ট হয়ে ফুলের সৌন্দর্য দেখতে ও ছবি তুলতে বিভিন্ন জায়গা থেকে আসছে দর্শনার্থীরা। দর্শনার্থীদের পদচারণায় ফসলের সামান্য ক্ষতি হলেও তাদের ছবি তুলতে বাঁধা দিচ্ছেন না কৃষকেরা।
উপজেলার রায়পুর গহিরা এলাকার কৃষক মোঃ মুজিবুর রহমান বলেন, আমি প্রথমবারের মতো ১৪গন্ডা সূর্যমুখী চাষ করেছি। ফসল ভালো হয়েছে। সবাই এখানে ছবি তুলতে আসছে দেখে আমার ভীষণ ভালো লাগে। এই পর্যন্ত আমার ২০ হাজার টাকা মতো খরচ হয়েছে আরো কিছু টুকটাক খরচ আছে। আশা করি খরচ পুষিয়ে লাভবান হবো।
চাতরী ইউনিয়ন সিংহরা গ্রামের কৃষক মোঃ জমির উদ্দিন জানান, আমি ৩৩ শতক জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছি। এক্ষেত্রে কৃষি অফিস থেকে সার এবং বীজ পেয়েছি। কৃষি কর্মকর্তারা নানাভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। এইপর্যন্ত প্রায় ১৮ হাজার টাকা মতো খরচ হয়েছে। ফসলও ভালো হয়েছে আশা করি লাভবান হবো।
রিয়াদ হোসেন নামের এক দর্শনার্থী বলেন, ফেইসবুকে সূর্যমুখী ফুলের ছবি দেখে খবর নিয়ে আমিও সূর্যমুখী দেখতে এলাম। সূর্যমুখীর এই সৌন্দর্য দেখে যেকারো মন ভালো হয়ে যাবে। এখানকার কৃষকেরাও খুবই আন্তরিক। তারা ছবি তুলতে কোনো ধরনের বাঁধা দিচ্ছেন না।
উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ সরওয়ার আলম জানান, ৭০-৮০ দিনের মধ্যেই সূর্যমুখীতে বীজ সংগ্রহ করা যায়। তারপর বীজ সংগ্রহ করে বীজ থেকে তেল বের করা হয়। মূলত পরীক্ষামুলক ভাবে এটি চাষাবাদ শুরু করা হলেও এই উপজেলার পরিবেশ সূর্যমুখীর জন্য অত্যন্ত অনুকূল। তাই এখানে সূর্যমুখী সম্ভাবনাময়।
এবিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমজান আলী জানান, কৃষকদের সরকারি প্রণোদনায় সূর্যমুখী বীজ ও সার এবং (নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চট্টগ্রাম ও চাঁদপুর প্রকল্প)র আওতায় সার, বীজ, বালাইনাশকসহ অন্যান্য উপকরণ সহায়ক হিসেবে দেয়া হয়েছে। দেশের মানুষের জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর তেলের নিশ্চয়তায় এই ফসলের চাষ করা হয়েছে। সূর্যমুখী ফুল থেকে উৎপাদিত তেলে ৪০ ভাগ লিনোলিক এসিড থাকে যা হার্টের জন্য অত্যন্ত ভালো। এছাড়া এতে কোলেস্টেরলের পরিমাণ সয়াবিন থেকে কম। এ ফুল থেকে তেল উৎপাদন করতে পারলে দেশের মানুষের ভোজ্য তেলের যে চাহিদা তা এই সূর্যমুখী চাষের মাধ্যমে পরিবর্তন করা সম্ভব এবং মানুষ স্বাস্থ্যসম্মত তেল খেতে পারবে।
নামঃ মো আরাফাত
(আনোয়ারা,চট্টগ্রাম)
মোবাইলঃ ০১৬৯০১৭৩৩৪১